ভাড়া বাড়িতে মিলল তরুণীর ঝুলন্ত মরদেহ, পরিবারের দাবি হত্যা

চুয়াডাঙ্গা শহরের গুলশানপাড়ার ভাড়া বাড়ি থেকে তানিয়া খাতুন (২২) নামে এক নারী ক্লিনিক কর্মীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা শহরের গুলশানপাড়ার ভাড়া বাড়ি থেকে তানিয়া খাতুন (২২) নামে এক নারী ক্লিনিক কর্মীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা শহরের গুলশানপাড়ার সেলিম মিয়ার বাড়ির তৃতীয় তলা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। পরে স্থানীয়রা তানিয়াকে দ্রুত সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়োজিত সদর থানা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আরাফাত ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, রাত ১০টার পর তানিয়া খাতুনকে জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।

তবে নিহত তানিয়া খাতুনের বড় ভাই বেল্টু রহমান দাবি করে বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আমার কাছে মনে হয়েছে এটা হত্যাকাণ্ড। আমার বোনকে হত্যার পর ঝুলিয়ে রেখেছে তার স্বামী আলামিন৷

নিহত তানিয়া খাতুন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের ঝোড়াঘাটা গ্রামের মাহাতাব আলীর মেয়ে এবং দামুড়হুদা উপজেলার উজিরপুর গ্রামের বাসিন্দা স্বর্ণকার আলামিনের স্ত্রী। স্বামী আলামিনকে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা শহরের গুলশান পাড়ার সেলিম মিয়ার তৃতীয় তলায় ভাড়া থাকতেন তানিয়া। তাওহীদ ইসলাম নামে ছয় বছরের এক ছেলে সন্তান আছে তাদের।

নিহত তানিয়া খাতুন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল এলাকায় বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান আখিঁতারা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আয়ার কাজ করতেন। তিনি অত্যন্ত জেদি মেয়ে ছিল বলে তার একাধিক সহকর্মী ও বাড়ির অন্যান্য ভাড়াটিয়ারা জানিয়েছেন। অতিরিক্ত জেদের কারণে তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন বলে ধারণা তাদের।

সেলিম মিয়ার বাড়ির এক নারী ভাড়াটিয়া নাম না প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তানিয়া তার স্বামীর সঙ্গে প্রায় সময় অসদাচরণ করতেন। কয়েকদিন ধরে স্বামী আলামিন তার নিজের বাড়িতে যেতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু তানিয়া যেতে দিতেন না। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কয়েকদিন ধরে মনোমালিন্য হয়ে আসছিল।

নিহত তানিয়ার এক নারী সহকর্মী নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, এখানে প্রায় ৪০ দিনের মতো কাজ করছেন তানিয়া। রাতে হঠাৎ শুনতে পাই তার মৃত্যু হয়েছে। আমি শুনেছি, তানিয়ার স্বামী আলামিন ১০ মিনিট দেরিতে বাড়িতে এসেছিলেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য ও কথা কাটাকাটি হয়।

তিনি বলেন,  তানিয়া তার স্বামীর সঙ্গে বাজে ব্যবহার করতেন দেখতাম। তিনি স্বামীকে ফোন করলে প্রথমবারেই তা না ধরা হলে তিনি তর্কবিতর্ক শুরু করতেন। পরে তার স্বামী একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরতেন না। এছাড়া তানিয়া যতক্ষণ বাড়িতে থাকতেন ততক্ষণ তার স্বামীকে কোথাও যেতে দিতেন না।

নিহত তানিয়ার ভাই বেল্টু রহমান বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি। ফ্যানের সঙ্গে যেভাবে দড়ি বাঁধা হয়েছে সেটা দেখে আমার কাছে মনে হয়েছে আমার বোন আত্মহত্যা করেনি। তাকে তার স্বামী মেরে ফেলেছে। তবে কী কারণে মেরেছে এটা এখনি বলতে পারছি না। তানিয়াকে নির্যাতন করা হতো কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন কোনো কথা আমার বোন আমাদের আগে জানায়নি।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আল ইমরান জুয়েল বলেন, আমরা তানিয়া খাতুনকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে তিনি নিজেই আত্মহত্যা করেছেন। কোনো সন্দেহজনক কিছু মনে হচ্ছে না। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট এলে জানা যাবে এটা আত্মহত্যা কিনা।

তবে তানিয়া খাতুনের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বর্তমানে মরদেহ সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে। শনিবার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (অপারেশন) হোসেন আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, একজন নারী আত্মহত্যা করেছেন বলে জেনেছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট এলে জানা যাবে এটা আত্মহত্যা কিনা। তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আফজালুল হক/এফআরএস

Topic:

See Latest News Visit Source Page